Breaking

মঙ্গলকাব্যের খুঁটিনাটি


মঙ্গলকাব্যের খুঁটিনাটি
মঙ্গলকাব্যের খুঁটিনাটি 


মঙ্গলকাব্য
পূর্ব প্রকাশের পর থেকে...

মঙ্গলকাব্যঃ
মঙ্গল অর্থ শুভ বা কল্যাণ। মধ্যযুগে হিন্দু ধর্মাবল্বী দিবদেবী নির্ভর এক আখ্যান(কাহিনী) কাব্য রচনা করেন যা মঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত। মঙ্গলকাব্যের রচনাকাল পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত( প্রায় চারশত বছর)। মঙ্গলকাব্যের নামকরণ হবার কারণ ২টি।
১. এক মঙ্গলবার পাঠ শুরু করে আর এক মঙ্গল বার শেষ করা হতো
২. মঙ্গল কাব্য পাঠ করলে বা শ্রবণ করলে বা ঘরে রাখলে সকল মঙ্গল সাধিত হত।

মঙ্গলকাব্যের শাখা তিনটি
যথা: 
১. মনসামঙ্গল
২. চন্ডীমঙ্গল
৩. ধর্মমঙ্গল।

তিনটি শাখার আদি কবি যথাক্রমে:

১. মনসা মঙ্গল – কানা হরি দত্ত।
২. চন্ডীমঙ্গল – আদি কবি- মানিক দত্ত (চর্তুদশ শতক),
প্রধান কবি- মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। উপাধি- “কবি কঙ্কণ”
৩. ধর্মমঙ্গল – ময়ুর ভট্ট।

অন্নদা মঙ্গল কাব্যের প্রধান কবি ভারত চন্দ্র রায় গুণাকর। মনসা মঙ্গল কাব্যের অপর নাম-পদ্মপূরাণ (১৪৯৮ খ্রীঃ)। মনসা মঙ্গল কাব্যের কয়েকজন কবির নাম হল- নারায়ণ দেব, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপিলাই, দ্বিজবংশীদাস।বিপ্রদাস পিপিলাই রচিত মনসামঙ্গল কাব্যের নাম “মনসা বিজয়”। মধ্যযুগের সবচাইতে প্রতিবাদী চরিত্র মনসা মঙ্গল কাব্যের চাঁদ সওদাগর। মনসামঙ্গল কাব্যের ২২ জন ছোট-বড় কবিকে একত্রে বাইশা বলা হয়। মঙ্গল ধারার তথা মধ্যযুগের শেষ কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর। ভারত চন্দ্রকে “গুণাকর” উপাধি দেন নবদ্বীপ বা নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। “চৈতন্যমঙ্গল” ও “ গোবিন্দ মঙ্গল” কাব্য দুটির শেষে মঙ্গল থাকলেও এগুলো মঙ্গল কাব্য নয় এগুলো বৈষ্ণব সাহিত্যের অংশ। একটি স্বার্থক মঙ্গল কাব্যের বৈশিষ্ট্য ৫ টি।

লেকচার - ৩ বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাগ (মধ্যযুগ ও অন্যান্য এর শেষাংশ)
---------------------------------------------------------------------------------
মুসলিম সাহিত্যঃ
বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর (১৫ শতক)
“ইউসুফ-জোলেখা” কাব্যগ্রন্থটি লিখেছেন শাহ মুহম্মদ সগীর, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ এর আমলে।
শাহ মুহম্মদ সগীর বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক কবি এবং ইউসুফ-জোলেখা বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক কাব্য।
ইউসুফ-জোলেখা আরও লিখেন আব্দুল হাকিম, ফকির গরীবুল্লাহ, ফকির মুহম্মদ প্রমুখ।
দৌলত উজ়ির বাহরাম খান রচিত কাব্য – লায়লী-মজনু, জঙ্গনামা।
কোরেশী মাগন ঠাকুরের উতসাহে আলাওল কাব্য রচনা করেন।
কোরেশী মাগন ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ – চন্দ্রাবতী
মর্সিয়া আরবী শব্দ যার অর্থ শোক করা, বিলাপ করা।
মর্সিয়া সাহিত্যের আদিকবি শেখ ফয়জুল্লাহের গ্রন্থের নাম জয়নাবে চৌতিশা।
আব্দুল হাকিমের রচিত কাব্য ইউসুফ-জোলেখা, নূরনামা
আলাওল এর রচিত কাব্যগ্রন্থ – পদ্মাবতী, সয়ফুলমূলক, বদিউজ্জামান, সিকান্দার নামা,

অনুবাদ সাহিত্যঃ
সংস্কৃত ভাষায় লিখিত পৌরাণিক কাব্য মহাভারতের মূল রচয়িতা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস দেব।
মহাভারত প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর।
সুলতান হোসেন শাহের সেনাপতি পরাগল শাহ’র পৃষ্ঠপোষকতায় কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারত রচনা করেন যা“পরাগলী মহাভারত” নামে পরিচিত।
সংস্কৃত ভাষায় লিখিত পৌরাণিক মহাকাব্য রামায়ণের মূল রচয়িতা বাল্মীকি।
রামায়ণ প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা।
রামায়ণের প্রথম মহিলা অনুবাদক – চন্দ্রাবতী।
শাহনামা মৌলিক গ্রন্থের রচয়িতা – ইরানের কবি ফেরদৌসি, বাংলা অনুবাদক – মোজাম্মেল হক।

গীতিকাঃ
আখ্যানমূলক লোকগীতি বাংলাসাহিত্যে গীতিকা নামে পরিচিত।
“গীতিকা” – কে ইংরেজীতে বলা হয় Ballad, যা ফারসিতে Ballet বা নৃত্য শব্দ থেকে এসেছে।
মৈমনসিংহ গীতিকা ২৩ টি ভাষায় অনূদিত হয়।
১৯২৩ সালে “মৈমনসিংহ গীতিকা” নামে সংকলন প্রকাশিত হয়।
“মহুয়া” পালাটির রচয়িতা দ্বিজ কানাই এবং “দেওয়ানা মদিনা” পালাটির রচয়িতা মনসুর বয়াতি।

পুঁথি সাহিত্যঃ
অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আরবি-ফারসি শব্দ মিশ্রিত কাব্যকে দোভাষী পুঁথি বলে।
“ফকির গরীবুল্লাহ” পুঁথি সাহিত্যের প্রথম সার্থক ও জনপ্রিয় কবি।
পুঁথি সাহিত্যের ভাষায় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইসলামী চেতনা সম্পৃক্ত।
দোভাষী বাংলা রচিত পুঁথি সাহিত্যকে বলা হয় – বটতলার পুঁথি।

কবিওয়ালা ও শায়েরঃ
কবিওয়ালা ও শায়েরের উদ্ভব আঠারো শতকের মাঝামাঝি থেকে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে।
আরবি-ফারসি-হিন্দি-উর্দু ভাষার মিশ্রণে মুসলমানের কাব্য রচয়িতাদের বলা হতো –শায়ের।
কবিতাকে যারা জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে গ্রহণ করত তাদের বলা হতো – কবিওয়ালা।

কবিগানঃ
দুই পক্ষের তর্ক ও বিতর্কের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত গানকে কবিগান বলা হয়
কবিগানের আদিগুরু গোঁজলা গুই, শ্রেষ্ঠ রচয়িতা – হরু ঠাকুর
কবিগান রচনা ও পরিবেশনায় বিশেষভাবে সুখ্যাতি লাভ করেছিলেন এন্টনি ফিরিঙ্গি ও রামপ্রসাদ রায়।

টপ্পাগানঃ
টপ্পাগান এর উদ্ভব- কবিগানের সমসাময়িককালে, হিন্দি টপ্পাগান এর আদর্শে।
বাংলা টপ্পাগানের জনক-নিধুবাবু বা রামনিধি গুপ্ত
আধুনিক বাংলা গীতিকবিতার সুত্রপাত – টপ্পাগান থেকে
টপ্পাগানের রচয়িতা – কালী মির্জা ও শ্রীধর কথক
পাঁচালীগানঃ
পাঁচালীগানের শক্তিশালী কবি – দাশরথি রায় /দাশু রায়
তার পাঁচালী পালা প্রকাশ হয়েছিল দশ খন্ডে

লোকসাহিত্যঃ
ইংরেজীতে traditional knowledge শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ “লোকসাহিত্য”।
জনসাধারণের মুখে মুখে প্রচলিত গান, কাহিনী, গল্প, ছড়া, প্রবাদ – লোকসাহিত্য।
লোকসাহিত্যের উপাদান জনশ্রুতিমূলক বিষয় এবং প্রাচীনতম সৃষ্টি ছড়া।
“হারামণি” হলো প্রাচীন লোকগীতি, এর সংকলক- মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন।
ড. আশুতোষ ভট্রাচার্য লোককথাকে – রূপকথা, উপকথা এবং ব্রতকথা এই তিন ভাগে ভাগ করেছেন।
ঠাকুরমার ঝুলি, ঠাকুরদাদার ঝুলি, ঠানদাদার থলে প্রভৃতি জনপ্রিয় রূপকথার সংকলক – দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার।
পশুপক্ষীর চরিত্র অবলম্বনে রচিত কাহিনীকে বলে – উপকথা যেমনঃ ঈশপের উপকথা।
মেয়েলী ব্রতে সঙ্গে সম্পর্কিত কাহিনী অবলম্বনে রচিত লোককথাই – ব্রতকথা।

No comments:

Post a Comment