দৈনন্দিন বিজ্ঞান- প্রথম পর্ব
বিজ্ঞান বিষয়টাকে আমরা যতোটা কঠিন ভাবি, আসলে
বিজ্ঞান ততো বেশি কঠিন না। একটু গুছিয়ে পড়লে বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক ভাল নম্বর পাওয়া
সম্ভব।প্রিলিমিনারি ও লিখিত – এ দুই ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো করলে
প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। আগের সিলেবাসে
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বিজ্ঞান,
তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার এই সবকিছুই একই
সাথে ছিল। সবকিছু মিলেয়ে গড়ে ১৫-২০ টা প্রশ্ন থাকত। কিন্তু নতুন সিলেবাসে, “বিজ্ঞান” এবং “তথ্য-প্রযুক্তি
ও কম্পিউটার” এই দুটি অংশকে আলাদা করা হয়েছে। এখন এই
দুই অংশ মিলিয়ে প্রায় ৩০ মার্কের মতো প্রশ্ন হয়ে থাকে। সুতরাং অনেক গুরুত্বপূর্ণ
বিজ্ঞান বিষয়টা।এই অংশটুকু ভালমতো শিখতে হবে। কারণ একটু বেশি পরিশ্রম করলে এই অংশ
থেকে বেশ ভাল মার্ক তোলা সম্ভব। আজকে আমরা আমাদের আলোচনা শুধুমাত্র বিজ্ঞানের
প্রাথমিক আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব। পরবর্তী পর্বগুলোতে বিজ্ঞানের পাশাপাশি
তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার নিয়েও বিস্তারিত লিখব।
বিজ্ঞানের সিলেবাস অনেক বিস্তৃত । তাই
প্রথম কাজ হলো, কোন টপিকগুলো পড়তে হবে আর কোন টপিকগুলো
ছেড়ে দিতে হবে, তা নির্বাচন করা। নির্বাচিত টপিকগুলোকে
কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ফেলা উচিত এই ভাবে যে –
খুব কঠিন,
কঠিন ও সহজ। এরপর খুব কঠিন ও কঠিন
টপিকগুলো বারবার পড়তে হবে।কেননা সহজ টপিকগুলো আপনি একটু পড়লেই পারবেন ।
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মূলত তিনটি ভাগে
প্রশ্ন করা হয়। ১. ভৌত বিজ্ঞান অর্থাৎ “পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন” ২. জীব
বিজ্ঞান ৩. আধুনিক বিজ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে-
বিভিন্ন ধাতব ও অধাতব পদার্থ, বিদ্যুৎ,
রোগ ও তার চিকিৎসা, তাপ, আবিষ্কার ও
আবিষ্কারক, পরিবেশ বিজ্ঞান, শব্দ, মানবদেহ, প্রাণীবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, পৃথিবীর-
আকার, আয়তন,
গতি,
মহাকাশ বিজ্ঞান ইত্যাদি অংশ থেকে। তবে
এছাড়াও পদার্থের ধর্ম, পানি,
বায়ুমণ্ডল,
খাদ্য ও পুষ্টি, ইলেক্ট্রনিক্স, চুম্বক, রাসায়নিক
বিক্রিয়া ইত্যাদি অংশ থেকেও প্রশ্ন হয়ে থাকে। পড়া শুরু করার আগে অবশ্যই বিগত বছরের
প্রশ্নগুলো ভালমতো দেখে নেবেন। আর যদি বুঝে বুঝে সমাধান করতে পারেন তাহলে সবথেকে
ভাল হয়। কোন বই থেকে পড়বেন ? দৈনন্দিন বিজ্ঞান অংশে ভাল করার জন্য
অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবম-দশম শ্রেণীর সাধারণ
বিজ্ঞান বইটি খুব ভালমতো পড়ে ফেলতে হবে। এই বইটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্ন
করার জন্য অনেক সমৃদ্ধ। আর পারলে নবম-দশম শ্রেণীর রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান
ও জীববিজ্ঞান এই বইগুলো ও পড়তে হবে। এই বইগুলো থেকে কিন্তু সবকিছু পড়তে হবে না। যে
বিষয়গুলো বা টপিকগুলো বেশি important, সেগুলো ভাল করে পড়তে হবে।সবকিছুকে একসাথে
একটু ঝালাই করার জন্য কোন একটি গাইড বই থেকে পড়লে আরও সুবিধা হবে। তাই পাঠ্য বইয়ের
পাশাপাশি একটি গাইড বইও রাখতে পারেন। কিভাবে পড়বেন?
আমরা আজকাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বাস
করছি। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাবহার করা অনেক কিছুর
সাথেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অনেক প্রশ্ন সরাসরি সম্পর্কিত। সম্ভবত তাই এই
অংশটাকে দৈনন্দিন বিজ্ঞান বলা হয়। মজার বিষয় হলো- বিসিএস ও অন্যান্য
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় জটিল কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব থেকে প্রশ্ন করা হয়না।
আমরা
নবম-দশম শ্রেণিতে যেটুকু আবশ্যকীয় বিজ্ঞান শিখেছিলাম সেটাই মূলত প্রশ্ন করার
ভিত্তি। বিজ্ঞান মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না। একটু বোঝার চেষ্টা করলেই দেখবেন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত তথ্যগুলো সহজেই মনে রাখতে পারছেন। আর এই জিনিসগুলো
অনেকেই গাইড বই দেখে পড়ে। আপনারা ভুলেও এই কাজটি করবেন না। কারণ পাঠ্যবইতে অনেক
চিত্র দেওয়া থাকে, ফলে একটি জিনিস সহজেই বুঝতে পারা যায়।যেমন, একাদশ
শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে ইলেক্ট্রনিকস চিত্রসহ ভাল করে বর্ণনা করা আছে। এছাড়া internet থেকে সহজে চিত্রসহ ধারণা নেয়া যায়। কিন্তু গাইড বইতে শুধুমাত্র জায়গায়
মধ্যে প্রচুর তথ্য দেওয়া থাকে, যা দেখে মূল বিষয়টি বোঝা অনেক কঠিন।
আপনারা হয়ত লক্ষ্য করেছেন যে- পিএসসি সম্প্রতি এমন ধরণের প্রশ্ন করছে যাতে না বুঝে
মুখস্থ করলে পরীক্ষায় ভাল করা সম্ভব না। তাই পাঠ্য চিত্র ও বর্ণনা দেখে বুঝে বুঝে
পড়ুন, খুব দ্রুত অনেক তথ্য মনে রাখতে পারবেন। বই
দেখে বুঝে বুঝে পড়লে বেশকিছু সুবিধা পাবেন। এখানে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন প্রশ্ন
এসেছে- “ নিচের কোনটি ধাতু?”। এখন আপনি
যদি কোন গাইড বই দেখে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন তাহলে দেখা যাবে এই একই প্রশ্ন আপনি
শিখে এসেছেন কিন্তু সেখানে যে অপশনগুলো ছিল এখানে সেগুলো নেই। ফলে আপনি শিখেও
উত্তর দিতে পারছেন না। কিন্তু আপনি যদি নবম-দশম শ্রেণীর বইটি পড়ে প্রস্তুতি নেন, তাহলে
দেখবেন পৃথিবীতে মোট ৯২ রকম পদার্থ পাওয়া যায়। এগুলোকে আবার একটি টেবিলের মধ্যে
সাজানো যায়। আপনি ঐ টেবিলে কয়েকবার চোখ বুলালেই ধাতু ও অধাতু সম্পর্কে আপনার বেশ
ভাল একটি ধারণা পেয়ে যাবেন।তাই পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি একটি গাইড বই রাখুন প্রস্তুতি
যাচাই করার জন্য। আগামী পর্বগুলোতে আমরা বিজ্ঞানের বাকি অংশ, কম্পিউটার
ও তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে বিস্তারিত দেখব। সবাই ভাল থাকুন।
No comments:
Post a Comment